Monday, January 17, 2011

পাঁচ লাখ শ্রমিকের ধোলাই খালে বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকা আয়

পাঁচ লাখ শ্রমিকের ধোলাই খালে বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকা আয়

০০মোহাম্মদ আবু তালেব

বিশাল শিল্প সম্ভাবনাময় ধোলাইখালের লেদ শিল্পে পাঁচ লাখ শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। ধোলাইখালের লেদ শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ মেশিনারী পার্টস থেকে শুরু করে বাইসাইকেল এমনকি ট্রেনের বগি ও যন্ত্রাংশ পর্যন্ত অনায়াসে নির্মাণ করছেন। হাল্কা প্রকৌশল এই শিল্পের বার্ষিক টার্নওভার ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই শিল্পের উদ্যোক্তারা প্রতি বছর উৎপাদিত যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ বিদেশে রফতানি করে আয় করছেন ৫০ কোটি টাকা। আর সরকারকে প্রতি বছর শিল্প উদ্যোক্তারা রাজস্ব আয় দিচ্ছেন ১৬৫ কোটি টাকারও অধিক। বিনিময়ে তারা সরকারের কাছ থেকে কোন সুযোগ-সুবিধাই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ধোলাইখালের ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিকরা। তারা কৃষি ও আইটি খাতের ন্যায় এই খাতকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিনা সুদে ঋণ তহবিলের (ইইএফ) আওতায় আনার দাবি জানান। তারা সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে বাঁচানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ধোলাইখাল, উত্তর ও দক্ষিণ মৈশুণ্ডি, নবাবপুর, টিপু সুলতান রোড, বনগ্রাম, ওয়ারী ও পাশর্্ববর্তী এলাকায় এই শিল্পের বিস্তৃতি ঘটেছে। ধোলাইখাল ও পাশর্্ববর্তী এলাকায় রয়েছে ছোট-বড় অর্ধলক্ষাধিক ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ বা হাল্কা প্রকৌশল শিল্প। এখানকার শ্রমিকদের বেশিরভাগেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। নেই কারিগরি কোন শিক্ষা। হাতের অভিজ্ঞতা আর চোখের মাপে তারা নিখুঁত থেকে নিখুঁততর মেশিনারী পার্টস তৈরি করে। যুগ যুগ ধরে বাস্তব অভিজ্ঞতার শক্তিতে বলিয়ান হয়ে ধোলাইখালের শ্রমিকরা একের পর এক যন্ত্রপাতি তৈরি করে চলেছেন। তাদের তৈরি সামগ্রী দেখে হতবাক হয়ে যান।

উন্নত বিশ্বের কারিগরি জ্ঞানে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী বাসিন্দাদের অনেকেই। চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। দেশের বাজারে এই শিল্পের এতটাই চাহিদা যে, ক্রেতারা যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য উদ্যোক্তাদের অগ্রিম অর্থ দিয়ে বুকিং দিয়ে রাখছেন। অথচ দুই দশক আগেও বিভিন্ন শিল্পখাত ও পরিবহন সেক্টরের যন্ত্রাংশের পুরোটাই আমদানি করা হতো। যন্ত্রাংশ ছাড়াও আস্ত নতুন আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে পুরান ঢাকার ধোলাইখালসহ বগুড়া ও যশোরের বিভিন্ন কারখানায়। বিদেশে এসব যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ রফতানি হচ্ছে।

হাল্কা প্রকৌশল শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স এসোসিয়েশনের (বিইআইওএ) সভাপতি আবদুর রাজ্জাক ইত্তেফাককে বলেন, দেশি তৈরি যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতি বছর শতাধিক আইটেম রফতানি করে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ কোটি ডলার আয় হচ্ছে। বাংলাদেশ বছরে সাত কোটি ৪০ লাখ ডলারের গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি করছে। আর হাল্কা প্রকৌশল শিল্প থেকেই দেশের বাজারে সরবরাহ করা হয় সাত কোটি ৫০ লাখ ডলার মূল্যের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ।

বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহাবুবুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, দেশে হাল্কা প্রকৌশল এই শিল্পে প্রায় তিনি হাজার আটশত রকমের যন্ত্র ও যন্তাংশ তৈরি হচ্ছে। যার মধ্যে ১৩৭টি আইটেম বিশ্বের ১৭টি দেশে রফতানি হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) নিবন্ধিত প্রায় দুই হাজার উদ্যোক্তা বিভিন্ন সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান সাব-কন্ট্রাকের মাধ্যমে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ সরবরাহ করছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন, বাংলাদেশ টেক্সটাইলস মিলস কপোরেশন, সিভিল এভিয়েশন, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন, বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ড, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, বন্দর ও সমুদ্র পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কতর্ৃপক্ষ, তিতাস, বাখরাবাদ ও জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানি, চিনি ও খাদ্য শিল্প কপোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হচ্ছে।

অপরদিকে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরি করা ছাড়াও মেরামতের শতকরা ৯০ ভাগ কাজ করছে এই শিল্প। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এমডি ও পুরনো ঢাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী মীর শওকত আলী ইত্তেফাককে বলেন, স্বাধীনতার আগে হাল্কা প্রকৌশল শিল্পে বাঙ্গালীদের তেমন অবদান ছিল না। বিহারি ও পাঞ্জাবিদের উদ্যোগে পুরনো ঢাকায় কয়েকটি ওয়ার্কশপ গড়ে তোলা হয়। অবাঙ্গালীদের প্রতিষ্ঠানে বাঙ্গালীরা শ্রমিক হিসাবে কাজ করতো। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে মালিকরা শ্রমিকদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে দেশ ছাড়ে। এভাবেই বাঙ্গালীদের একটা বড় অংশ হাল্কা এই প্রকৌশল শিল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ দিনের শ্রমে-ঘামে আজকের এই সমৃদ্ধ শিল্প সেক্টরটি গড়ে তোলেন সরকারি সহায়তা ছাড়াই।

রিনা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক মোঃ নূরুজ্জামান শেখ ইত্তেফাককে বলেন, একমাত্র সাবেক এরশাদ সরকারের আমলে শিল্প উদ্যোক্তা ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের একটি দল জাপানে কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছিল। সে সময় হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের উকর্ষতা সাধনে সরকারিভাবে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পও চালু করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সরকারগুলো তা বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী কোন সরকারই এই শিল্পের উন্নয়নে এগিয়ে আসেনি। বরং ট্যাক্স আর ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে নানাভাবে শিল্প উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সরকারের ট্যাক্স বিভাগের হয়রানির শিকার হয়ে অনেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ গুটিয়ে বিদেশে চলে গেছেন।
Source: Daily Ittefaq, 17th January-2011

Wednesday, January 5, 2011

অপার সম্ভাবনাময় ধোলাইখাল

অপার সম্ভাবনাময় ধোলাইখাল

০০ মোহাম্মদ আবু তালেব

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে পুরনো ঢাকার ধোলাইখাল। এখানে মোটর পার্টস ও ইলেকট্রনিক্স তৈরির এক বিশাল সম্ভাবনা গড়ে উঠেছে। লাইনার, পিস্টন, বেয়ারিং থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি মোটর পার্টস, গাড়ির ব্রেকড্রাম, ইঞ্জিন, কার্টিজ, সকেট, জগ, জাম্পার, স্প্রিং, হ্যামার, ম্যাকেল জয়েন্ট, বল জয়েন্টসহ নানা সামগ্রী তৈরি হচ্ছে।

ধোলাইখালে তৈরি মেশিনারি পার্টস ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ নানা দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া ভাল রিকন্ডিশন্ড পার্টসের জন্য ধোলাইখালের দেশব্যাপী সুনাম রয়েছে। পুরনো গাড়ি ভেঙ্গে পার্টস সংগ্রহ করা হয় এখানে। ধোলাইখালের পার্টসের চাহিদা গোটা দেশে। ইতিমধ্যেই সারাদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের অপার সম্ভাবনাময় এই ধোলাইখালের মেশিনারি ও পার্টস শিল্প এক সময় বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

ঢাকা বিশারদ অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন ইত্তেফাককে বলেন, ধোলাইখালের উৎপত্তি মোগল আমলে সুবেবাংলার রাজধানী হিসাবে ঢাকার জন্মলগ্ন থেকে। ঢাকের আওয়াজের ব্যাপ্তি জুড়ে ঢাকা রাজধানী হওয়ার পর প্রথম সুবেদার ইসলাম খান চিশতি (১৬১০-১৩) বুড়িগঙ্গার সঙ্গে দুলাই নদীর সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি খাল খনন করেছিলেন, যা পরবতর্ীকালে দোলাইখাল ও শেষ লোকমুখে ধোলাইখাল নামে পরিচিতি পায়। স্বাধীনতার আগে থেকেই এখানে এলাকায় মোটর পার্টস তৈরির গোড়াপত্তন ঘটে। স্বাধীনতা পরবতর্ী সময়ে ধোলাইখাল ভরাট হতে থাকে। এইসঙ্গে এখানে প্রসার ঘটতে থাকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের।

কমমূল্যে ভাল রিকন্ডিশন্ড পার্টস কেনার জন্যই ধোলাইখাল সুনাম অর্জন করেছে। বর্তমানে এ এলাকায় ছোটবড় কয়েক হাজার দোকান ও কারখানা রয়েছে। এ শিল্প ব্যবসার সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক শ্রমিক ও ব্যবসায়ী। ধোলাইখালের পুরো এলাকাতেই ছড়িয়ে রয়েছে পার্টস এবং ইলেকট্রনিক্স দোকান ও কারখানা। গাড়ির পার্টসসহ বিভিন্ন অংশের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা মার্কেট। মার্কেটের মধ্যে রয়েছে হাজী মনসুর 'মার্কেট', 'বাঁশপট্টি মার্কেট', 'গাছ মার্কেট' এবং 'টং মার্কেট।' হাজী মনসুর মার্কেটে প্রাইভেটকারের স্পেয়ার পার্টস, বাঁশপট্টি মার্কেটে টয়োটা, হোন্ডাসহ অন্যান্য গাড়ির পার্টস, গাছ মার্কেটে বেডফোর্ডের পার্টস, টং মার্কেটে প্রায় সব ধরনের স্পেয়ার পার্টস এবং এর পাশেই গাড়ির পুরনো টায়ার ও রিম পাওয়া যায়।

এসব মার্কেটে প্রায় সব ধরনের প্রাইভেটকার, বাস ও ট্রাকের স্পেয়ার পার্টস পাওয়া যায়। সুলভমূল্যে ভাল রিকন্ডিশন্ড পার্টস কিনতে গাড়ির মালিকরা বাধ্য হয়েই ধোলাইখাল যান।

ধোলাইখালের ব্যবসায়ীরা জানান, এসব পার্টস বিভিন্ন মোটর গ্যারেজ থেকে সংগৃহীত এবং কিছু জিনিস নিজস্ব কারিগরি দক্ষতায় তৈরি করা হয়। পুরনো গাড়ি ভেঙ্গেও পার্টস সংগ্রহ করা হয়।

ধোলাইখালের রীনা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক হাজী নূরুজ্জামান শেখ বলেন, তার প্রতিষ্ঠানটি মোটর গাড়ির সব ধরনের পার্টস মেরামত ও গাড়ির ২৫ শতাংশ যন্ত্রপাতি তৈরি করে থাকে। তিনি বলেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি যন্ত্রাংশ পাশর্্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। রপ্তানিকৃত লাইনার, পিস্টন, নজল, বেয়ারিংসহ নানা যন্ত্রাংশ গুণগত মানের দিক থেকে চীন ও জাপানে তৈরি যন্ত্রাংশের চেয়ে অধিকতর টেকসই এবং দামে সস্তা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, গাড়ির ব্রেকডাম, ইঞ্জিনসহ সব ধরনের যন্ত্রাংশ মেরামত করা হয় এ ধরনের কারখানায়। সাধারণত গাড়ির মালিকরা এখানে স্পেয়ার পার্টসের জন্যই আসেন। নতুনের চেয়ে অনেক কম দামে এসব মালামাল কিনে থাকেন। এখানে গাড়ির কার্টিজ, সকেট জাম্পার, স্প্রিং, হ্যাঙ্গার, ম্যাক্ল জয়েন্ট, বল জয়েন্টসহ সবই মেলে অতি সুলভে। আর যে পার্টস মিলবে না তার পুরনোটি দিলে নতুনের মত তৈরিও করে দেয়া হয়। এসব যন্ত্রাংশের দাম গাড়ির মডেল অনুযায়ী হয়ে থাকে।

ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা গাড়ি চোর সিন্ডিকেটের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে চোরাই যন্ত্রাংশ এনে বিক্রি করেন। তবে সংশিস্নষ্টরা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এখানে গাড়ির সাইড গস্নাস বা বডির যন্ত্রাংশ বিক্রি হয় না যা চোরাই হিসাবে ধরা হয়। মাদকাসক্ত যুবক ও ছিঁচকে চোর এসব যন্ত্রাংশ চুরি করে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে। অল্পসংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য সবাইকে ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

ধোলাইখালের প্রবীণ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন মিয়া জানান, ধোলাইখালের তৈরি পার্টস ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ভুটানসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

ধোলাইখাল এলাকার পার্টস শিল্প উন্নয়নে এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৪ সালে একটি প্রতিনিধিদল জাপানে গিয়ে গাড়ি তৈরির কারখানা পরিদর্শনসহ বেশকিছু কারিগরি জ্ঞান অর্জন করে আসে। সেটিই ছিল সরকারি পর্যায়ের প্রথম এবং শেষ উদ্যোগ। তারপর আর কোন ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই এখানকার 'মেকাররা' নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে যন্ত্রাংশ তৈরি করছেন। দেশে তৈরি এসব যন্ত্রাংশের গায়ে লেখা থাকে 'মেড ইন জাপান'। তারা বলেন, 'দেশের জিনিসের কদর নাই তাই জাপানের নামেই মাল চালাই।' গাড়ির ইঞ্জিন, পার্টস ছাড়াও ধোলাইখালে রয়েছে ইলেকট্রনিক্স বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরির কারখানা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ফিরোজ আলম জানান, তারা নিজস্ব উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন সকেট ক্যাব্ল, বেঞ্চ ওভার সুইচ, লাইট টেপের মতো সরঞ্জামাদির কারখানা। ২০০১ সালে ছোট পরিসরে আরম্ভ করেছিলেন তার কারখানাটি। বর্তমানে ৩৫ জন কর্মচারি নিয়ে দুইটি কারখানা রয়েছে তার। তিনি জানান, ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জামাদির চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। দেশে তৈরি এসব জিনিসের দাম খুবই কম। দেশীয় শিল্প বাঁচাতে ভ্যাট কর্তৃপক্ষের হয়রানি থেকে মুক্তি দাবি করেন তারা।

সরকার শিল্প উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করলে দেশের সম্ভাবনাময় ধোলাইখালের পার্টস শিল্প ও ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জামাদি অনেক এগিয়ে যাবে। দেশীয় শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় এ শিল্পটি দেশের জন্য বয়ে আনতে পারে উজ্জ্বল সম্ভাবনা এমনটিই মনে করেন ধোলাইখালের পার্টস ব্যবসায়ী, কারখানার মালিক-শ্রমিক ও বিশেষজ্ঞ মহল।
Source: Daily Ittefaq

Tuesday, January 4, 2011

ধোলাইখালে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে

ধোলাইখালে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে
শেখ মোশাররফ সেন্টু

পুরনো গাড়ির যন্ত্রাংশ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না; অচল গাড়ি সচল করা, গাড়ির নকশা পরিবর্তন, মেরামতসহ গাড়ির যে কোন সমস্যার সমাধান সম্ভব গাড়ির যন্ত্রাংশের মার্কেট ধোলাইখালে।
ধোলাইখালের এই খ্যাতি ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে গত ৫০ বছর ধরে। এটি এখন পরিণত হয়েছে দেশের প্রধান মোটরগাড়ির মেরামত কেন্দ্রে এবং পুরনো গাড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়ার শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে। এই এলাকায় রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় ওয়ার্কশপ, যারা বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও মেরামত করছে। ফলে ব্যবসা বাণিজ্যের ও কেন্দ্র হয়ে উঠছে ধোলাইখাল।
ধোলাইখালের গাড়ির যন্ত্রাংশের মার্কেটটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬০ সালে। শুধুমাত্র বাস ও ট্রাকের যন্ত্রাংশই পাওয়া যেত তখন। কারণ ঐ সময়ে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে থাকে এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশের প্রয়োজনীয়তা। সাথে সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকে ধোলাইখালের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা। ১৯৮০ সালের পর থেকে এই ব্যবসা বাড়তে থাকে দ্রম্নততর এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়ার মার্কেট হিসেবে ধোলাইখালের নাম ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশব্যাপী।
বাংলাদেশের যোগাযোগ খাত নির্ভরশীল রিকন্ডিশন যানবাহনের ওপর। এইসব যানবাহনের অনেক যন্ত্রাংশই একটা সময় শেষে নতুন পাওয়া যায়না। ফলে রিকন্ডিশন যানবাহনের মালিকদের শেষ ভরসাস্থল গাড়ির যন্ত্রাংশের এই মার্কেট। এছাড়া সারা দেশের গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসা ধোলাইখালে এখন নগরীর অন্যতম ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্র। এখানে ছোট এবং বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০০০-৫০০০ দোকান রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো এসএমই পর্যায়ের। এইসব দোকানে মালিক শ্রমিকসহ ৩০০০০-৪০০০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
যে কোন যানবাহনের ইঞ্জিনের নাট বল্টু, চেসিস, বিয়ারিং টায়ার স্প্রিংসহ যে কোন ছোট অথবা বড় যন্ত্রাংশ সবই পাওয়া যায় ধোলাইখালে। ব্যবসা বৃদ্ধির কারণে অনেক দোকান শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ধরনের যন্ত্রাংশই বিক্রি করছে। কিছু দোকান শুধুমাত্র রিয়ারিং সংগ্রহ এবং বিক্রি আবার কিছু দোকান শুধু টায়ার অথবা স্টিয়ারিংই বিক্রি করছে। ধোলাইখালে যে যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় সেগুলো প্রধানত সংগ্রহ করা হয় পুরনো ও ব্যবহার অযোগ্য যানবাহন থেকে। যেগুলো বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টসহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে নিলামের মাধ্যমে ক্রয় করা হয়। গাড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়ার আরও একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে দুর্ঘটনাজনিত কারণে বাতিল হওয়া গাড়ি। এসব গাড়ির ভাল যন্ত্রাংশ পুনরায় ব্যবহার করা হয় এবং বাকি অংশটুকু স্ক্রাপ আকারে বিক্রি করে দেয়া হয়। এছাড়া যন্ত্রাংশের একটি অংশ বিদেশ থেকেও আমদানি করা হয়। বিদেশ থেকে যে যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয় সেগুলো প্রধানত জাপানী ব্রান্ডের গাড়ির যন্ত্রাংশ। অন্যান্য দেশের কিছু ব্রান্ডের গাড়ির যন্ত্রাংশও আমদানি করা হয়।
বর্তমানে ধোলাইখাল মিনি মটর ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে পরিণত হচ্ছে। গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন, নিনিয়াম, ব্রেক ড্রাম, প্যাড ড্রাম, ব্রেক সিলিন্ডার, বাম্পার ব্রাকেট, পিস্টন ইত্যাদি লেদ মেশিনের মাধ্যমে ধোলাইখালেই তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া শ্যালো পাম্পের ইঞ্জিন ব্যবহার করে টেম্পো, ট্রাক্টর, ইট ভাঙ্গার যন্ত্রসহ বিভিন্ন যন্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। যা দেশের অভ্যনত্মরীণ বাজারের চাহিদা কিছুটা মেটাতে সৰম হচ্ছে। ধোলাইখালে উৎপাদিত পণ্য দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্র্রি এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনিক্যাল সেন্টার এবং নিউ মিলবার্ট ইন্টারন্যাশনালের মধ্যে ত্রিপৰীয় চুক্তি স্বাৰরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী নিউ মিলবার্ট ইন্টারন্যাশনাল ১৫০০০ ডলারের বাম্পার ব্রাকেট, রাবার ব্রাশ এবং সাসপেনশন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির আদেশ দিয়েছে। নমুনা হিসেবে পিস্টন আয়না, ফেন্ডারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশও ভবিষ্যতে রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। কর্মসংস্থান ও দৰ শ্রমিক তৈরিতে ধোলাইখাল গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পুরনো গাড়িকে নতুন আদল দেয়া, গাড়ির ভেতর ও বাইরের সাজসজ্জা, অচল গাড়ি সচল করা, মেরামতসহ যে কোন কাজে তারা খুবই দৰ। 'প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে গাড়িও তৈরি করা সম্ভব'_ বলেন রম্নবেল নামে ধোলাইখালের একজন মিস্ত্রী। এছাড়া তারা যে কোন যন্ত্র যেমন জেনারেটর, পস্নাস্টিক মেশিনসহ অন্য যে কোন যন্ত্র মেরামতে সৰম। এ প্রসঙ্গে রম্নবেল আরও বলেন, আমাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিৰা নাই, সবকিছুই শিখি কাজ করে করে। সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা পেলে আমরা দেশের উন্নয়নে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারতাম।
ধোলাইখালের যন্ত্রাংশ ব্যবসা গড়ে উঠেছে মূলত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের জায়গায়। বেশিরভাগ দোকান ছোট হওয়ায় মালামাল ফুটপাথ এমনকি রাসত্মার উপরও রাখতে হয়। এ প্রসঙ্গে ধোলাইখাল টং দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আফসার উদ্দিন আফসু বলেন, এই ব্যবসা গড়ে উঠেছে মূলত ব্যবসায়ীদের নিজ উদ্যোগে। এখানে আমাদের প্রধান সমস্যা জায়গার। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এখানে একটি মার্কেট করে দিলে তাদের আয়ও বাড়বে আমাদের সমস্যারও সমাধান হবে। এ ব্যাপারে কতর্ৃপৰের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। চোরাই গাড়ি এবং যন্ত্রাংশ ব্যবসার সাথে জড়িত ধোলাইখালের কিছু ব্যবাসায়ী এ প্রসঙ্গে সভাপতি বলেন এ রকম যাতে না ঘটে সেজন্য ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়মিত বসছি। কারণ কিছু খারাপ ব্যবসায়ীর কারণে ধোলাইখালের সুনাম ৰুণ্ন্ন হোক তা আমরা চাই না।
Source: Daily janakantha

ধোলাইখাল ও ভালুকায় তৈরি যন্ত্রাংশে গাড়ি চলবে যুক্তরাষ্ট্রে

ধোলাইখাল ও ভালুকায় তৈরি যন্ত্রাংশে গাড়ি চলবে যুক্তরাষ্ট্রে
এপ্রিল ৩০-এ, ২০১০
ধোলাইখালের কারখানায় গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিক। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

ধোলাইখালের কারখানায় গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিক। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

আবুল কাশেম, ঢাকা থেকে :

ঢাকার ধোলাইখাল ও ময়মনসিংহের ভালুকায় তৈরি যন্ত্রাংশে গাড়ি চলবে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে রপ্তানির জন্য ইতিমধ্যে গাড়ির যন্ত্রাংশের নমুনা তৈরি করা হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিটাকের গুণগতমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছে নমুনা যন্ত্রাংশ। নমুনার মান দেখতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মিলবার্ট ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিদল চলতি মাসেই ঢাকা আসছে। তাদের অনুমোদনের পর আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি। ভালুকা ও ধোলাইখালে অবস্খিত দিদার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড এসব যন্ত্রাংশ তৈরি করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আরো তিনটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও জাপান ও কানাডা বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর নিউ মিলবার্ট ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালিক নিশান রহিম বাংলাদেশে তৈরি গাড়ির বাম্পার ব্রাকেট, রাবার ব্রাশ ও সাসপেনশন কিটস আমদানির জন্য বিটাক ও বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিইআইওএ) সঙ্গে চুক্তি করেন। পরে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ থেকে গ্রিল, পিস্টন, মউলুডং, ফেন্ডার ও গাড়ির কাচ আমদানি করার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়।

বিইআইওএর সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির জন্য এরই মধ্যে নমুনা যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়েছে। নমুনা পাঠানো ব্যয়বহুল হওয়ায় তা করা হচ্ছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধিদল চলতি মাসেই ঢাকায় এসে নমুনা পরীক্ষা করবে বলে তিনি জানান। আবদুর রাজ্জাক আশা প্রকাশ করে বলেন, নমুনা যন্ত্রাংশ দেখে নিশ্চয়ই তাঁরা অনুমোদন দেবেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গাড়ির যন্ত্রাংশ রপ্তানি শুরু হবে।

বিটাকের অতিরিক্ত পরিচালক ড. ইহসানুল করিম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রনিক কম্পানিসহ মোট তিনটি প্রতিষ্ঠান টেলিফোন ও ই-মেইলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ থেকে গাড়ির পার্টস আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কর্মকর্তারাও বাংলাদেশ থেকে পার্টস আমদানির প্রস্তাব করেছেন। কানাডার বেশকিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশ থেকে গাড়ির পার্টস আমদানি করবে বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’

তিনি জানান, এসব দেশ গাড়ি তৈরি করলেও গাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদন করে না। তারা মূলত চীন, তাইওয়ান ও ভারত থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশে শ্রম সস্তা হওয়ায় রপ্তানিকারক অন্য দেশগুলোর তুলনায় কম দামে যন্ত্রাংশ রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী যন্ত্রাংশের বাজারে প্রবেশ করতে হলে রাজধানীর ধোলাইখাল, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্খানে থাকা হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পকে কর অবকাশের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে দিতে হবে স্বল্পসুদের ঋণ।

বিটাক আশা করছে, দেশের হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পকে উপযুক্ত প্রণোদনা দিতে পারলে এক দশকের মধ্যেই এটি দেশের প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হতে পারে। জাহাজ ভাঙা লোহা থেকে তৈরি গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক পণ্য ও কৃষি খাতের যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ তৈরির পর তা রপ্তানি করলে মুনাফা হবে অনেক বেশি। এক টাকার লোহায় তৈরি যন্ত্রাংশ ১০ টাকায় রপ্তানি করা সম্ভব।

বিইআইওএ জানায়, সারা দেশে প্রায় ৪০ হাজার হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ হাজার প্রতিষ্ঠান রিপেয়ারিং সার্ভিসিংয়ের কাজ করে। বাকি প্রায় চার হাজার কারখানা নতুন যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরি করে। তবে দু-তিন দশকের অভিজ্ঞতা নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও উন্নত প্রযুক্তির অভাবে এ শিল্পের বিকাশ ঘটছে না।
Source: http://bangla71.net

Monday, January 3, 2011

কী পারে না ধোলাইখাল!

কী পারে না ধোলাইখাল!

পুরান ঢাকার ধোলাইখাল আর জিনজিরা বিখ্যাত বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য। বলা হয়ে থাকে, খুব কম জিনিসই আছে যা কি না সেখানকার দক্ষ কারিগররা তৈরি করতে পারেন না। সম্প্রতি ধোলাই খাল গিয়েছিলাম। সরেজমিন দেখলাম ধোলাইখালের কর্মীদের দক্ষতা আর মনোবল। কিছুকাল আগে চীন ভ্রমণ করে জেনে এসেছি সেখানেও ছিল অসংখ্য ধোলাইখাল ধরণের অপ্রশিক্ষিত জনশক্তি। রাষ্ট্রের সহায়তা পেয়ে তারা আজ বিশ্বসেরা। আমাদের ধোলাইখালকে পরিচর্যা করলে একদিন তারাও বিস্ময়কর রকম সফল হবে অনুমান করা যায়।

যখন ঢাকায় সত্যিই ধোলাইখাল প্রবাহিত হতো সেই তখন থেকে অর্থাৎ পাকিস্তান আমলে অবাঙালি বিহারি ও পাঞ্জাবিরা বিচ্ছিন্নভাবে এখানে তৈরি করতেন বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ। স্বাধীনতার পর ধোলাইখালে কাজ শুরু করেন বাঙালিরা। এখনকার ধোলাইখাল এলাকায় অর্থাৎ নারিন্দা থেকে শুরু করে টিপু সুলতান রোডসহ নবাবগঞ্জ পর্যন্ত চলে তিন ধরনের ব্যবসা। ১. বিদেশি যন্ত্রাংশ আমদানি ও বিক্রি, ২. যন্ত্রাংশ মেরামতের কাজ আর বাকিরা নিজেরাই ছোট ছোট অন্ধকার ঘরে চাইনিজ, ইন্ডিয়ান আর দেশে তৈরি লেদ মেশিনে তৈরি করেন বিভিন্ন ধরনের খুচরা যন্ত্রাংশ।
ধোলাইখালের দক্ষ শ্রমিকদের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। ছোটবেলা থেকেই হাতে-কলমে কাজ করতে করতে শিখেছেন তারা। আমাদের সাধারণ ধারণা, ধোলাইখালের কারিগররা নকল করতে ওস্তাদ, কেউ কেউ ঠাট্টা করে এদের উৎপাদিত পণ্যকে মেড ইন জিনজিরাও বলে থাকেন।
এখানকার উৎপাদকরা স্বপ্ন দেখেন একদিন চীন, জাপান ও তাইওয়ানের মতোই তারা সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবেন। ধোলাইখালের খুচরা যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারীরা অনেকে দাবি করেন, তাদের পণ্য চীনা পণ্যের চাইতে ভালো। কিন্তু কাঁচামালের অভাব, বিদ্যুৎ সমস্যা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তারা পৌঁছতে পারছেন না কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে।
ধোলাইখালের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোর জন্য সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করছে ট্যাবলেট-ক্যাপসুল প্যাকেটজাতকরণের আধুনিক যন্ত্র। বিদেশ থেকে আমদানি করলে যে খরচ হতো তারচেয়ে অনেক কম দামে তারা দিতে পারছেন এই মেশিন।
আশির দশকে এরশাদ সরকার প্রথম দৃষ্টি দেয় ধোলাইখালের হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের দিকে। ধোলাইখাল-জিনজিরা মডেল প্রকল্প চালু করে এখানকার উৎপাদকদের জন্য ৫ কোটি টাকা ঋণ ও সরকারি কল-কারখানার খুচরা যন্ত্রপাতির ৩০ শতাংশ ধোলাইখাল থেকে নেয়ার আদেশ করেন তিনি। তারপর থেকে আর কোনো সরকারই এদের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
Source: hashara.wordpress.com

Sunday, January 2, 2011

ধোলাইখাল : গাড়ির পুরোনো যন্ত্রাংশের বাজার

ধোলাইখাল : গাড়ির পুরোনো যন্ত্রাংশের বাজার

ধোলাইখাল নামটিতে খাল শব্দটি থাকলেও এখানে এলে কোন খাল কিংবা জলাশয় খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। পুরোনো ঢাকায় নবাবপুর রোডের মোড় থেকে শুরু করে নারিন্দা পর্যন্ত এর বিস্তৃতি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই ধোলাইখালে পুরোন যন্ত্রাংশের ব্যবসা শুরু হয়। এখানে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় হাজার পাঁচেক খুচরা যন্ত্রাংশের দোকান রয়েছে। মোটর পার্টসের দোকান ছাড়াও এখানে রয়েছে ড্রাম শিট, লেদ মেশিন, পুরোনো লোহা লক্কড়ের দোকান। মালিক, কর্মচারি, কারিগর মিলিয়ে হাজার দশেক মানুূষ তাদের জীবিকার জন্য ধোলাইখালের উপর নির্ভরশীল। ধোলাইখালের কারিগররা এখানে কাজ করতে করতে একসময় নিজেরাই দোকানের মালিক হন। এদের দক্ষতা অবিশ্বাস্য। প্রাতিষ্ঠানিক কারিগরি শিক্ষা দেয়া গেলে এরা বিশ্বমানের মোটর মেকানিক হবার যোগ্যতা রাখে।
ধোলাই খালে মূলত বিক্রি হয় মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ। পুরোন নতুন সবধরনের যন্ত্রাংশই এখানে পাওয়া যায় তবে পুরোনো যন্ত্রাংই বেশি। বডি থেকে শুরু করে টায়ার পর্যন- গাড়ির প্রতিটি যন্ত্রাংশই এখানে খুঁজে পাবেন। ঢাকার অন্যান্য জায়গায় গাড়ির নতুন যন্ত্রাংশ পাওয়া গেলেও মানুষ সাধারনত ধোলাইখালে আসে কারন এখানে রিকন্ডিশন্ড যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়; দাম নতুনের থেকে অনেক কম। ধোলাইখালের আরেকটি সুবিধা হল কোন যন্ত্রাংশ কেনার পর সেটা আপনার গাাড়িতে ফিট করার জন্য কারিগর সেখানেই পেয়ে যাবেন। প্রতিটি দোকানেই একজন দুজন কারিগর থাকে তারা দোকান থেকে যন্ত্রাংশ কেনার পর তা গাড়িতে লাগিয়ে দিতে সাহায্য করে।
ক্রেতারা অনেক সময় প্রতারনারও স্বীকার হন এখানে। গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম সম্পর্কে ধারনা না থাকলে ক্রেতাকে পড়তে হতে পারে বিপাকে। কারন বিক্রেতারা কোনও যন্ত্রের দাম চাইতে পারে ন্যায্য মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে যন্ত্রাংশ কেনার সময় সঙ্গে এমন কাউকে নিয়ে যাওয়া উচিৎ যার ধোলাইখালের দাম সম্পর্কে ধারনা রয়েছে।
রিকন্ডিশন্ড এই খুচরা যন্ত্রাংশগুলো তারা আমদানি করে চীন, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস-ান, সিঙ্গাপুর থেকে। এখানে প্রায় সব মডেলের গাড়ির বিশেষ টয়োটা, নিশান, হোন্ডা, মিৎসুবিশি, সুজুকি, মারুতির যন্ত্রাংশ বেশি পাওয়া যায়।
বাস এবং ট্রাকের মধ্যে বেড ফোর্ড, ইসুজু, নিশান, হিনো, ভলভো, টাটা, অশোক লেল্যান্ড, টারসেল, আইয়ার ,ক্যান্টার প্রভৃতি গাড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়।

দাম জেনে রাখা ভালো
আগেই বলা হয়েছে, যন্ত্রাংশের দাম সম্পর্কে ধারনা না থাকলে এ বাজারে ক্রেতাকে পড়তে হতে পারে বিপাকে। সেক্ষেত্রে দাম জেনে রাখা ভালো। যেমন; সেলফ ১৫ শ’ থেকে ২ হাজার ৫ শ’, ডায়নামো ১৫ শ’ থেকে ২ হাজার, ডিস্ট্রিবিউটর ২ হাজার থেকে ৫ হাজার, কার্বোরেটর ২ হাজার ৫ শ’ থেকে ৬ হাজার, ফ্যান মটোর ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫ শ’, রেডিয়েটর ২ হাজার ৫ শ’ থেকে ৭ হাজার, গিয়ার বক্স ২ হাজার থেকে ৭ হাজার, ইঞ্জিন ব্লক ১৫ শ’ থেকে ৩ হাজার, পিস্টন সেট ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫ শ’, বাল্ব সেট ৫ শ’ থেকে ১৫ শ’, ক্লাচ প্লেট ৫ শ’ থেকে ১ হাজার, প্রেশার প্লেট ১ হাজার ৫ শ’ থেকে ২ হাজার, অয়েল পাম্প ১ হাজার ৫ শ’ থেকে ২ হাজার, এসি পাম্প ৫ শ’ থেকে ৮ শ’, প্লাগ ১ হাজার থেকে ৩ হাজার, ইঞ্জিন পুলি ৫ শ’ থেকে ১ হাজার ৫ শ’, মবিল চেম্বার ৫ শ’ থেকে ১ হাজার।
ইঞ্জিনও পাওয়া যায় বিভিন্ন মডেলের। যেমন; হানড্রেড ফাইভ এ ৩০ হাজার, ফোর ই ২৭ হাজার, নাইন টি ৫০ হাজার, নাইন টি ফাইভ এ ৩০ হাজার, ফাইভ কে লাইটএজ ৬০ হাজার, ক্রাউন এক্স ১ লাখ, কোরোনা ফোর এক্স এ্যান্ড থ্রি এক্স ৩৫ হাজার টাকা।

যেভাবে ধোলাইখালে পৌঁছাবেন
গুলিস-ান থেকে ধোলাইখালে রিকশায় আসতে খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ টাকা এবং বাসে খরচ ২ টাকা। মতিঝিল থেকে ধোলাইখালের অবস্থান দক্ষিন পশ্চিম দিকে। মতিঝিল থেকে এখানে বাসে আশা না গেলেও রিকশায় আসা যায় সহজেই। মতিঝিল থেকে ধোলাইখালের রিকশা ভাড়া ১৫-২০ টাকা। সদরঘাট থেকে পায়ে হেঁটে এখানে আসতে সময় লাগে পনের মিনিট ও রিকশায় খরচ হয় ৮ টাকা।
Source:http://sonarbangladesh.com/

ধোলাইখাল

ধোলাইখাল এলাকা হিসেবে ধোলাইখালের প্রতিষ্ঠাও ঢাকার সঙ্গে সঙ্গেই। বাংলার রাজধানী ঢাকা হওয়ার পর প্রথম সুবাদার ইসলাম চিশতী (১৬১০-১৩ খ্রিস্টাব্দ) বুড়িগঙ্গার সঙ্গে দুলাই নদীর সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি খাল খনন করেছিলেন, যা পরে ধোলাইখাল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মোগল নৌবাহিনীর যাতায়াতের সুবিধার জন্যই এ খাল নির্মাণ করা হয়। ঢাকার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য এ খালের ওপর বেশ কয়েকটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। লোহারপুলের কল্যাণেই ধোলাইখাল হয়ে উঠেছিল দর্শনীয় এক স্থান। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ কর্মচারী কর্নেল ডেভিডসনও তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে এ পুলের কথা উল্লেখ করেছেন। ১৯০৯ সালে ধোলাইখাল এবং তার শাখা-প্রশাখাসহ ১২ মাইল জলপথ বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে প্রস্তাব দেন তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা। ১৯১৭ সালে প্যাট্রিক গেড্ডেস এর নাব্যতা বৃদ্ধির তাগিদ দেন। ১৯৪০ সালেও ধোলাইখাল তার স্বকীয়তা অনেকটা ধরে রাখে। ধীরে ধীরে এর প্রশস্ততা কমতে থাকলে ১৯৬৪-৬৫ সালে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে এর সংস্কার করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৭১, ১৯৮৭ এবং সর্বশেষ ২০০০ সালে খালটি ভরাটের মাধ্যমে হত্যা করা হয় ধোলাইখালকে।
Source: Daily Kalerkantho