Sunday, January 2, 2011

ধোলাইখাল : গাড়ির পুরোনো যন্ত্রাংশের বাজার

ধোলাইখাল : গাড়ির পুরোনো যন্ত্রাংশের বাজার

ধোলাইখাল নামটিতে খাল শব্দটি থাকলেও এখানে এলে কোন খাল কিংবা জলাশয় খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। পুরোনো ঢাকায় নবাবপুর রোডের মোড় থেকে শুরু করে নারিন্দা পর্যন্ত এর বিস্তৃতি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই ধোলাইখালে পুরোন যন্ত্রাংশের ব্যবসা শুরু হয়। এখানে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় হাজার পাঁচেক খুচরা যন্ত্রাংশের দোকান রয়েছে। মোটর পার্টসের দোকান ছাড়াও এখানে রয়েছে ড্রাম শিট, লেদ মেশিন, পুরোনো লোহা লক্কড়ের দোকান। মালিক, কর্মচারি, কারিগর মিলিয়ে হাজার দশেক মানুূষ তাদের জীবিকার জন্য ধোলাইখালের উপর নির্ভরশীল। ধোলাইখালের কারিগররা এখানে কাজ করতে করতে একসময় নিজেরাই দোকানের মালিক হন। এদের দক্ষতা অবিশ্বাস্য। প্রাতিষ্ঠানিক কারিগরি শিক্ষা দেয়া গেলে এরা বিশ্বমানের মোটর মেকানিক হবার যোগ্যতা রাখে।
ধোলাই খালে মূলত বিক্রি হয় মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ। পুরোন নতুন সবধরনের যন্ত্রাংশই এখানে পাওয়া যায় তবে পুরোনো যন্ত্রাংই বেশি। বডি থেকে শুরু করে টায়ার পর্যন- গাড়ির প্রতিটি যন্ত্রাংশই এখানে খুঁজে পাবেন। ঢাকার অন্যান্য জায়গায় গাড়ির নতুন যন্ত্রাংশ পাওয়া গেলেও মানুষ সাধারনত ধোলাইখালে আসে কারন এখানে রিকন্ডিশন্ড যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়; দাম নতুনের থেকে অনেক কম। ধোলাইখালের আরেকটি সুবিধা হল কোন যন্ত্রাংশ কেনার পর সেটা আপনার গাাড়িতে ফিট করার জন্য কারিগর সেখানেই পেয়ে যাবেন। প্রতিটি দোকানেই একজন দুজন কারিগর থাকে তারা দোকান থেকে যন্ত্রাংশ কেনার পর তা গাড়িতে লাগিয়ে দিতে সাহায্য করে।
ক্রেতারা অনেক সময় প্রতারনারও স্বীকার হন এখানে। গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম সম্পর্কে ধারনা না থাকলে ক্রেতাকে পড়তে হতে পারে বিপাকে। কারন বিক্রেতারা কোনও যন্ত্রের দাম চাইতে পারে ন্যায্য মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে যন্ত্রাংশ কেনার সময় সঙ্গে এমন কাউকে নিয়ে যাওয়া উচিৎ যার ধোলাইখালের দাম সম্পর্কে ধারনা রয়েছে।
রিকন্ডিশন্ড এই খুচরা যন্ত্রাংশগুলো তারা আমদানি করে চীন, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস-ান, সিঙ্গাপুর থেকে। এখানে প্রায় সব মডেলের গাড়ির বিশেষ টয়োটা, নিশান, হোন্ডা, মিৎসুবিশি, সুজুকি, মারুতির যন্ত্রাংশ বেশি পাওয়া যায়।
বাস এবং ট্রাকের মধ্যে বেড ফোর্ড, ইসুজু, নিশান, হিনো, ভলভো, টাটা, অশোক লেল্যান্ড, টারসেল, আইয়ার ,ক্যান্টার প্রভৃতি গাড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়।

দাম জেনে রাখা ভালো
আগেই বলা হয়েছে, যন্ত্রাংশের দাম সম্পর্কে ধারনা না থাকলে এ বাজারে ক্রেতাকে পড়তে হতে পারে বিপাকে। সেক্ষেত্রে দাম জেনে রাখা ভালো। যেমন; সেলফ ১৫ শ’ থেকে ২ হাজার ৫ শ’, ডায়নামো ১৫ শ’ থেকে ২ হাজার, ডিস্ট্রিবিউটর ২ হাজার থেকে ৫ হাজার, কার্বোরেটর ২ হাজার ৫ শ’ থেকে ৬ হাজার, ফ্যান মটোর ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫ শ’, রেডিয়েটর ২ হাজার ৫ শ’ থেকে ৭ হাজার, গিয়ার বক্স ২ হাজার থেকে ৭ হাজার, ইঞ্জিন ব্লক ১৫ শ’ থেকে ৩ হাজার, পিস্টন সেট ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫ শ’, বাল্ব সেট ৫ শ’ থেকে ১৫ শ’, ক্লাচ প্লেট ৫ শ’ থেকে ১ হাজার, প্রেশার প্লেট ১ হাজার ৫ শ’ থেকে ২ হাজার, অয়েল পাম্প ১ হাজার ৫ শ’ থেকে ২ হাজার, এসি পাম্প ৫ শ’ থেকে ৮ শ’, প্লাগ ১ হাজার থেকে ৩ হাজার, ইঞ্জিন পুলি ৫ শ’ থেকে ১ হাজার ৫ শ’, মবিল চেম্বার ৫ শ’ থেকে ১ হাজার।
ইঞ্জিনও পাওয়া যায় বিভিন্ন মডেলের। যেমন; হানড্রেড ফাইভ এ ৩০ হাজার, ফোর ই ২৭ হাজার, নাইন টি ৫০ হাজার, নাইন টি ফাইভ এ ৩০ হাজার, ফাইভ কে লাইটএজ ৬০ হাজার, ক্রাউন এক্স ১ লাখ, কোরোনা ফোর এক্স এ্যান্ড থ্রি এক্স ৩৫ হাজার টাকা।

যেভাবে ধোলাইখালে পৌঁছাবেন
গুলিস-ান থেকে ধোলাইখালে রিকশায় আসতে খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ টাকা এবং বাসে খরচ ২ টাকা। মতিঝিল থেকে ধোলাইখালের অবস্থান দক্ষিন পশ্চিম দিকে। মতিঝিল থেকে এখানে বাসে আশা না গেলেও রিকশায় আসা যায় সহজেই। মতিঝিল থেকে ধোলাইখালের রিকশা ভাড়া ১৫-২০ টাকা। সদরঘাট থেকে পায়ে হেঁটে এখানে আসতে সময় লাগে পনের মিনিট ও রিকশায় খরচ হয় ৮ টাকা।
Source:http://sonarbangladesh.com/

No comments:

Post a Comment