Saturday, January 1, 2011

ধোলাইখাল : সুনামের সঙ্গে আছে দুর্নামটাও

ধোলাইখালসুনামের সঙ্গে আছে দুর্নামটাও
গাড়ির নতুন-পুরনো যন্ত্রাংশ কেনা-বেচা বা মেরামত করার ঢাকার সবচেয়ে বড় কেন্দ্র এ অঞ্চল। তাই এ এলাকার ব্যবসায়ীদের নানা দুর্ভোগ নিয়ে লিখছেন তোফাজ্জল হোসেন রুবেল ও মাহমুদুল হাসান। ছবি তুলেছেন তারেক আজিজ নিশক, ৭ আগস্ট ২০১০
নামকরণের ইতিহাস
একসময় ধোলাইখালের সঙ্গে ঢাকার নামটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। ধোলাইখাল ছিল ঢাকার প্রধান জলপথ ও নগর রক্ষার পরিখা। পরবর্তীকালে ঢাকার আবর্জনা নিঃসারক হিসেবে পরিণত হয়। এ খাল ঢাকা শহরকে করেছিল দুই ভাগে বিভক্ত। নলিনীকান্ত ভট্টশালীর কথা_ঢাকার প্রথম সুবেদার ইসলাম খাঁ-ই খনন করেছিলেন ধোলাইখাল। উদ্দেশ্য, নগররক্ষা ও জলপথ হিসেবে ব্যবহার। ভট্টশালীর ধারণাই হয়তো ঠিক। কারণ মোগলরা সম্ভবত ধোলাই নদী বলতে বুড়িগঙ্গাকে বুঝিয়েছিল। ইসলাম খাঁর এক সেনাপতি মির্জা নাথান 'বাহরীস্তান-ই-গায়বী' নামে একটি পাণ্ডুলিপি রেখে গেছেন, যেখানে উল্লেখ আছে তাঁর ঢাকা আগমনের বর্ণনা। নাথানের কথা_ধোলাইর যে শাখাটি ডেমরার দিকে, তার পাশে ছিল বেগ মুরাদের দুটি দুর্গ। এ শাখাটি পরিচিত ধোলাইখাল নামে। এ খালের উৎপত্তি বাবুবাজারের পাকুরতলির কাছ থেকে জিন্দাবাহার, গোয়ালনগর, নবাবপুর, নারিন্দা, জালুয়ানগর, হাল শরফতগঞ্জ হয়ে লোহার পুল হয়ে আবার মিশেছে বুড়িগঙ্গায়। মোগল আমলে ধোলাইখাল ঢাকার প্রধান জলপথ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। শহরের সৌন্দর্যও বাড়িয়েছিল খালটি। নিশ্চয়ই মোগলরা খালটি যত্নের সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ করত।
উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে ধোলাইখালের দুই তীরে বাড়িঘর নির্মিত হতে থাকে। ২০-২৫ বছর আগে বাড়িঘরের পেছনের দিকটি ছিল খালের দিকে। সব বাড়িঘরের পেছনটা খালের দিকে হওয়ায় মলমূত্র পড়ত খালে। ধোলাইখাল কালক্রমে পরিণত হলো নোংরা-দূষিত দুর্গন্ধময় এক খালে। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকায় আসার জন্য বর্ষায় সিলেট থেকে আসা নৌকাও এই খাল দিয়ে ব্যবহার করা হতো। ১৯০৯ সালে প্রকৌশলীরা ধোলাইখাল ও তার শাখা-প্রশাখাসহ ১২ মাইল জলপথ বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করেন। ১৯১৭ সালে, ঢাকার নগর পরিকল্পনা করতে গিয়ে গেড্ডেস সাহেব বারবার এই খালের কথা উল্লেখ করে, সেই প্রকৌশলীর রেফারেন্স টেনে লিখেছিলেন, হল্যান্ড ও বেলজিয়ামের প্রণালিব্যবস্থার কিছুটা যদি দেখে থাকেন, কোনো ইউরোপবাসী বা ভ্রমণশীল ভারতীয়_তবে তাঁকে খোলা মন নিয়ে দৃষ্টি দিতে বলছি এই চমৎকার পুরনো ধোলাইখাল, আর নগরীর উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিমাংশজুড়ে তার বিন্যাসের প্রতি। ষাটের দশকের দিকে জমি দখলের প্রক্রিয়ায় ধোলাইখাল হারিয়ে যেতে থাকে। এখন পুরোটাই ভরাট করে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে বোঝার উপায় নেই এ জায়গাটিতে কোনো একসময় খাল ছিল।
Source: Daily Kalerkantho,

No comments:

Post a Comment