Tuesday, January 4, 2011

ধোলাইখাল ও ভালুকায় তৈরি যন্ত্রাংশে গাড়ি চলবে যুক্তরাষ্ট্রে

ধোলাইখাল ও ভালুকায় তৈরি যন্ত্রাংশে গাড়ি চলবে যুক্তরাষ্ট্রে
এপ্রিল ৩০-এ, ২০১০
ধোলাইখালের কারখানায় গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিক। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

ধোলাইখালের কারখানায় গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিক। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

আবুল কাশেম, ঢাকা থেকে :

ঢাকার ধোলাইখাল ও ময়মনসিংহের ভালুকায় তৈরি যন্ত্রাংশে গাড়ি চলবে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে রপ্তানির জন্য ইতিমধ্যে গাড়ির যন্ত্রাংশের নমুনা তৈরি করা হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিটাকের গুণগতমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছে নমুনা যন্ত্রাংশ। নমুনার মান দেখতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মিলবার্ট ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিদল চলতি মাসেই ঢাকা আসছে। তাদের অনুমোদনের পর আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি। ভালুকা ও ধোলাইখালে অবস্খিত দিদার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড এসব যন্ত্রাংশ তৈরি করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আরো তিনটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও জাপান ও কানাডা বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর নিউ মিলবার্ট ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালিক নিশান রহিম বাংলাদেশে তৈরি গাড়ির বাম্পার ব্রাকেট, রাবার ব্রাশ ও সাসপেনশন কিটস আমদানির জন্য বিটাক ও বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিইআইওএ) সঙ্গে চুক্তি করেন। পরে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ থেকে গ্রিল, পিস্টন, মউলুডং, ফেন্ডার ও গাড়ির কাচ আমদানি করার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়।

বিইআইওএর সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির জন্য এরই মধ্যে নমুনা যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়েছে। নমুনা পাঠানো ব্যয়বহুল হওয়ায় তা করা হচ্ছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধিদল চলতি মাসেই ঢাকায় এসে নমুনা পরীক্ষা করবে বলে তিনি জানান। আবদুর রাজ্জাক আশা প্রকাশ করে বলেন, নমুনা যন্ত্রাংশ দেখে নিশ্চয়ই তাঁরা অনুমোদন দেবেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গাড়ির যন্ত্রাংশ রপ্তানি শুরু হবে।

বিটাকের অতিরিক্ত পরিচালক ড. ইহসানুল করিম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রনিক কম্পানিসহ মোট তিনটি প্রতিষ্ঠান টেলিফোন ও ই-মেইলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ থেকে গাড়ির পার্টস আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কর্মকর্তারাও বাংলাদেশ থেকে পার্টস আমদানির প্রস্তাব করেছেন। কানাডার বেশকিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশ থেকে গাড়ির পার্টস আমদানি করবে বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’

তিনি জানান, এসব দেশ গাড়ি তৈরি করলেও গাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদন করে না। তারা মূলত চীন, তাইওয়ান ও ভারত থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশে শ্রম সস্তা হওয়ায় রপ্তানিকারক অন্য দেশগুলোর তুলনায় কম দামে যন্ত্রাংশ রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী যন্ত্রাংশের বাজারে প্রবেশ করতে হলে রাজধানীর ধোলাইখাল, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্খানে থাকা হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পকে কর অবকাশের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে দিতে হবে স্বল্পসুদের ঋণ।

বিটাক আশা করছে, দেশের হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পকে উপযুক্ত প্রণোদনা দিতে পারলে এক দশকের মধ্যেই এটি দেশের প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হতে পারে। জাহাজ ভাঙা লোহা থেকে তৈরি গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক পণ্য ও কৃষি খাতের যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ তৈরির পর তা রপ্তানি করলে মুনাফা হবে অনেক বেশি। এক টাকার লোহায় তৈরি যন্ত্রাংশ ১০ টাকায় রপ্তানি করা সম্ভব।

বিইআইওএ জানায়, সারা দেশে প্রায় ৪০ হাজার হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ হাজার প্রতিষ্ঠান রিপেয়ারিং সার্ভিসিংয়ের কাজ করে। বাকি প্রায় চার হাজার কারখানা নতুন যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরি করে। তবে দু-তিন দশকের অভিজ্ঞতা নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও উন্নত প্রযুক্তির অভাবে এ শিল্পের বিকাশ ঘটছে না।
Source: http://bangla71.net

No comments:

Post a Comment