Tuesday, January 4, 2011

ধোলাইখালে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে

ধোলাইখালে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে
শেখ মোশাররফ সেন্টু

পুরনো গাড়ির যন্ত্রাংশ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না; অচল গাড়ি সচল করা, গাড়ির নকশা পরিবর্তন, মেরামতসহ গাড়ির যে কোন সমস্যার সমাধান সম্ভব গাড়ির যন্ত্রাংশের মার্কেট ধোলাইখালে।
ধোলাইখালের এই খ্যাতি ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে গত ৫০ বছর ধরে। এটি এখন পরিণত হয়েছে দেশের প্রধান মোটরগাড়ির মেরামত কেন্দ্রে এবং পুরনো গাড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়ার শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে। এই এলাকায় রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় ওয়ার্কশপ, যারা বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও মেরামত করছে। ফলে ব্যবসা বাণিজ্যের ও কেন্দ্র হয়ে উঠছে ধোলাইখাল।
ধোলাইখালের গাড়ির যন্ত্রাংশের মার্কেটটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬০ সালে। শুধুমাত্র বাস ও ট্রাকের যন্ত্রাংশই পাওয়া যেত তখন। কারণ ঐ সময়ে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে থাকে এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশের প্রয়োজনীয়তা। সাথে সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকে ধোলাইখালের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা। ১৯৮০ সালের পর থেকে এই ব্যবসা বাড়তে থাকে দ্রম্নততর এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়ার মার্কেট হিসেবে ধোলাইখালের নাম ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশব্যাপী।
বাংলাদেশের যোগাযোগ খাত নির্ভরশীল রিকন্ডিশন যানবাহনের ওপর। এইসব যানবাহনের অনেক যন্ত্রাংশই একটা সময় শেষে নতুন পাওয়া যায়না। ফলে রিকন্ডিশন যানবাহনের মালিকদের শেষ ভরসাস্থল গাড়ির যন্ত্রাংশের এই মার্কেট। এছাড়া সারা দেশের গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসা ধোলাইখালে এখন নগরীর অন্যতম ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্র। এখানে ছোট এবং বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০০০-৫০০০ দোকান রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো এসএমই পর্যায়ের। এইসব দোকানে মালিক শ্রমিকসহ ৩০০০০-৪০০০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
যে কোন যানবাহনের ইঞ্জিনের নাট বল্টু, চেসিস, বিয়ারিং টায়ার স্প্রিংসহ যে কোন ছোট অথবা বড় যন্ত্রাংশ সবই পাওয়া যায় ধোলাইখালে। ব্যবসা বৃদ্ধির কারণে অনেক দোকান শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ধরনের যন্ত্রাংশই বিক্রি করছে। কিছু দোকান শুধুমাত্র রিয়ারিং সংগ্রহ এবং বিক্রি আবার কিছু দোকান শুধু টায়ার অথবা স্টিয়ারিংই বিক্রি করছে। ধোলাইখালে যে যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় সেগুলো প্রধানত সংগ্রহ করা হয় পুরনো ও ব্যবহার অযোগ্য যানবাহন থেকে। যেগুলো বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টসহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে নিলামের মাধ্যমে ক্রয় করা হয়। গাড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়ার আরও একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে দুর্ঘটনাজনিত কারণে বাতিল হওয়া গাড়ি। এসব গাড়ির ভাল যন্ত্রাংশ পুনরায় ব্যবহার করা হয় এবং বাকি অংশটুকু স্ক্রাপ আকারে বিক্রি করে দেয়া হয়। এছাড়া যন্ত্রাংশের একটি অংশ বিদেশ থেকেও আমদানি করা হয়। বিদেশ থেকে যে যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয় সেগুলো প্রধানত জাপানী ব্রান্ডের গাড়ির যন্ত্রাংশ। অন্যান্য দেশের কিছু ব্রান্ডের গাড়ির যন্ত্রাংশও আমদানি করা হয়।
বর্তমানে ধোলাইখাল মিনি মটর ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে পরিণত হচ্ছে। গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন, নিনিয়াম, ব্রেক ড্রাম, প্যাড ড্রাম, ব্রেক সিলিন্ডার, বাম্পার ব্রাকেট, পিস্টন ইত্যাদি লেদ মেশিনের মাধ্যমে ধোলাইখালেই তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া শ্যালো পাম্পের ইঞ্জিন ব্যবহার করে টেম্পো, ট্রাক্টর, ইট ভাঙ্গার যন্ত্রসহ বিভিন্ন যন্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। যা দেশের অভ্যনত্মরীণ বাজারের চাহিদা কিছুটা মেটাতে সৰম হচ্ছে। ধোলাইখালে উৎপাদিত পণ্য দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্র্রি এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনিক্যাল সেন্টার এবং নিউ মিলবার্ট ইন্টারন্যাশনালের মধ্যে ত্রিপৰীয় চুক্তি স্বাৰরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী নিউ মিলবার্ট ইন্টারন্যাশনাল ১৫০০০ ডলারের বাম্পার ব্রাকেট, রাবার ব্রাশ এবং সাসপেনশন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির আদেশ দিয়েছে। নমুনা হিসেবে পিস্টন আয়না, ফেন্ডারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশও ভবিষ্যতে রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। কর্মসংস্থান ও দৰ শ্রমিক তৈরিতে ধোলাইখাল গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পুরনো গাড়িকে নতুন আদল দেয়া, গাড়ির ভেতর ও বাইরের সাজসজ্জা, অচল গাড়ি সচল করা, মেরামতসহ যে কোন কাজে তারা খুবই দৰ। 'প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে গাড়িও তৈরি করা সম্ভব'_ বলেন রম্নবেল নামে ধোলাইখালের একজন মিস্ত্রী। এছাড়া তারা যে কোন যন্ত্র যেমন জেনারেটর, পস্নাস্টিক মেশিনসহ অন্য যে কোন যন্ত্র মেরামতে সৰম। এ প্রসঙ্গে রম্নবেল আরও বলেন, আমাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিৰা নাই, সবকিছুই শিখি কাজ করে করে। সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা পেলে আমরা দেশের উন্নয়নে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারতাম।
ধোলাইখালের যন্ত্রাংশ ব্যবসা গড়ে উঠেছে মূলত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের জায়গায়। বেশিরভাগ দোকান ছোট হওয়ায় মালামাল ফুটপাথ এমনকি রাসত্মার উপরও রাখতে হয়। এ প্রসঙ্গে ধোলাইখাল টং দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আফসার উদ্দিন আফসু বলেন, এই ব্যবসা গড়ে উঠেছে মূলত ব্যবসায়ীদের নিজ উদ্যোগে। এখানে আমাদের প্রধান সমস্যা জায়গার। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এখানে একটি মার্কেট করে দিলে তাদের আয়ও বাড়বে আমাদের সমস্যারও সমাধান হবে। এ ব্যাপারে কতর্ৃপৰের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। চোরাই গাড়ি এবং যন্ত্রাংশ ব্যবসার সাথে জড়িত ধোলাইখালের কিছু ব্যবাসায়ী এ প্রসঙ্গে সভাপতি বলেন এ রকম যাতে না ঘটে সেজন্য ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়মিত বসছি। কারণ কিছু খারাপ ব্যবসায়ীর কারণে ধোলাইখালের সুনাম ৰুণ্ন্ন হোক তা আমরা চাই না।
Source: Daily janakantha

No comments:

Post a Comment